ঔপন্যাসিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
- ড. সমরেশ মজুমদার
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে এক অভিনবসঞ্চারী লেখক। তাঁর কুড়িটি উপন্যাস নিয়ে আলোচনা বর্তমান গ্রন্থের মূল নিহিত। এ থেকেই ধারণা করা যাবে বাংলা উপন্যাসে তার নিজস্ব জগতটি। তাঁর অস্তিবাদী ধারণা, প্রাচীন মূল্যবোধের প্রতি আস্থা এবং আধ্যাত্মবাদী চিন্তন বিষয়ে তাঁর অসংখ্য উপন্যাসের মধ্যে কয়েকটি আলোচ্য উপন্যাস পাঠাকের অনুধাবনযোগ্য। উল্লেখ্য প্রাচীন মূল্যবোধের ধারক লেখক অনায়াস পটুত্বে আধুনিক জীবনযাত্রা, আধুনিক যুবক-যুবতীদের মনোজগতকে একই গ্রন্থে ধরে তুলতেও সক্ষম হয়েছেন। গভীরতা যেমন তাঁর উপন্যাসব্যাপী, তেমনি রসবোধের প্রকাশ সর্বত্র দৃশ্যমান হয়। আসলে একটি সমগ্রতার নামই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় — এই সমগ্রতার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টাই আছে এ-গ্রন্থে। বর্তমান সময়সীমায় তিনিই সবচেয়ে জনপ্রিয় পঠিত উপন্যাসকার, ব্যতিক্রমী রচনানীতির প্রবর্তক হয়েও এ-ক্ষমতার অধিকারীকে অভিনন্দন দেবার ভাষা পাওয়া যায় না।
জন্ম ১৯৪২, ঢাকা শহরে। তার “বাংলা উপন্যাসের পঁচিশ বছর (১৯২৩-৪৭)” প্রকাশের মধ্য দিয়ে অ্যাকাডেমিক ও নিষ্ঠাবান পাঠকের কাছে পরিচিত হন। এখনার বাংলা প্রবন্ধ-সাহিত্যের জগতে তিনি একজন অতি সমাদৃত ব্যক্তিত্ব। একই সঙ্গে বাংলা উপন্যাস ও গল্পের বেশ কিছু উর্দীপনাসঞ্চারী রচনার নিবিড় অনুধ্যানে একটি নতুন জগতের সৃষ্টি করেছেন। বাংলায় বহু প্রতিষ্ঠিত ঔপন্যাসিক ও গল্পকারের কখনো বা একগুচ্ছ আবার কখনো একটি নির্দিষ্ট রচনাকে নিয়ে যে প্রবন্ধ রচনা করেছেন, সেগুলিতে তার সুচিন্তিত ও গবেষণাত্মক আলোকসম্পাত জনসমক্ষে এসেছে, যা চিন্তাশীল পাঠককে ভাবায়। আরো একটি কৃতিত্ব অধ্যাপক মজুমদারের মধ্যে বর্তমান, তা হলো এমন সব সম্ভাবনাময় লেখকদের সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন যারা পরবর্তী পর্যায়ে বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত লেখক হিসেবে গণ্য হয়েছেন। সম্পাদনাকর্মে ড. মজুমদারের সাফল্যও বিস্মরণযোগ্য নয়। প্রথম প্রকাশকালে ‘জগদীশ গুপ্ত : জীবন ও সাহিত্য’ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছিল। এছাড়াও অন্যান্য সম্পাদনা গ্রন্থে একই নিষ্ঠা ও যোগ্যতার পরিচয় তিনি রেখেছেন।