পদ্মানদীর মাঝি : পরিমিতি ও সৌষম্য
- সমরেশ মজুমদর
পদ্মানদীর মাঝি : পরিমিতি ও সৌষম্য মানিক বন্দোপাধ্যায়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের বছ বর্ণিত আলোকদর্পণ। একজন লেখক যে কী নিপুণভাবে একটি অঞ্চলের নদী ও তদ্পার্শবর্ত্তী অঞ্চলের জীবন-আলেখ্য রচনা করতে পারেন তার নানাকৌণিক বিবরণ গ্রন্থমধ্যে বিশ্লেষিত হয়েছে। পুনরপি একজন লেখককে সমগ্র বিচার করতে গিয়ে ভার সমকালীন ঔপন্যাসিকবর্গের তুলনামুলকতায় স্থাপন প্রয়োজন, একারণে সমকালীন উপন্যাসিকদের মধ্যে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের তুলনা করা হয়েছে ও উপন্যাসের শ্রেণীচরিত্র দেখাতে গিয়ে রোমান্টিকতা ও আঞ্চলিকতার প্রশ্ন যেমন এসেছে, তেমনি পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে চিত্রিত জনজীবনের প্রসঙ্গও উপস্থাপিত হয়েছে । অপিচ, পদ্মার ভূমিকা এবং নিয়তির অনিবর্ধতা আল্যানের কেন্দ্রবিন্দু একথা স্পষ্টরেখায় চিত্রিত। পদ্মা-গল্লা-তিতাসের প্রাসঙ্গিকতায় সমালোচা উপন্যাস সমাপ্ত হয়নি, বিশ্বসাহিত্যের দরবারে 'পদ্মানদীর মাঝি'র উৎকর্ষ ও আলোচনার অনাতম বিষয়। এভাবেই মানিক-উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য ও শিল্পরূপ প্রতিটি অনুপুঙ্খে বিশিষ্ট। গ্রন্থটির এটি পঞ্চম সংস্করণ। এখানে সংস্কারের প্রকৃত অর্থ অনুক্ষণ মনযোগী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
জন্ম ১৯৪২, ঢাকা শহরে। তার “বাংলা উপন্যাসের পঁচিশ বছর (১৯২৩-৪৭)” প্রকাশের মধ্য দিয়ে অ্যাকাডেমিক ও নিষ্ঠাবান পাঠকের কাছে পরিচিত হন। এখনার বাংলা প্রবন্ধ-সাহিত্যের জগতে তিনি একজন অতি সমাদৃত ব্যক্তিত্ব। একই সঙ্গে বাংলা উপন্যাস ও গল্পের বেশ কিছু উর্দীপনাসঞ্চারী রচনার নিবিড় অনুধ্যানে একটি নতুন জগতের সৃষ্টি করেছেন। বাংলায় বহু প্রতিষ্ঠিত ঔপন্যাসিক ও গল্পকারের কখনো বা একগুচ্ছ আবার কখনো একটি নির্দিষ্ট রচনাকে নিয়ে যে প্রবন্ধ রচনা করেছেন, সেগুলিতে তার সুচিন্তিত ও গবেষণাত্মক আলোকসম্পাত জনসমক্ষে এসেছে, যা চিন্তাশীল পাঠককে ভাবায়। আরো একটি কৃতিত্ব অধ্যাপক মজুমদারের মধ্যে বর্তমান, তা হলো এমন সব সম্ভাবনাময় লেখকদের সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন যারা পরবর্তী পর্যায়ে বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত লেখক হিসেবে গণ্য হয়েছেন। সম্পাদনাকর্মে ড. মজুমদারের সাফল্যও বিস্মরণযোগ্য নয়। প্রথম প্রকাশকালে ‘জগদীশ গুপ্ত : জীবন ও সাহিত্য’ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছিল। এছাড়াও অন্যান্য সম্পাদনা গ্রন্থে একই নিষ্ঠা ও যোগ্যতার পরিচয় তিনি রেখেছেন।