বিদ্যাসাগরের গদ্যশৈলী
- বিভাবসু দত্ত
বাংলা ভাষায় গদ্যচর্চার ভগীরথ বিদ্যাসাগর। গদ্যরচনার সেই আদিম পর্বে এবং আশ্চর্য সরলতায় অনুভব ও মননের যুগ্ম সম্মিলনে বিদ্যাসাগর যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, সেই কুসুমাস্তীর্ন পথে পরবর্তীরা হেঁটে গেছেন। বঙ্গীয় নবজাগৃতির বিশিষ্ট পুরোহিত বিদ্যাসাগর গদ্যরচনাকে শাস্ত্র-ব্যাখ্যা, সমাজসংস্কার ও শিক্ষাপ্রসারের কাজে সুনিপুণ কৌশলে ব্যবহার কারেছিলেন। আধুনিক শৈলীবিজ্ঞানের অণুবিক্ষণ যন্ত্রের তলায় লেখে, সেই গদ্য নির্মাণের প্রতিটি স্তর দেশ কাল সমাজ ও সর্বোপরি বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিত্বের পরিচয় চিহ্নকে তা কেমনভাবে বহন করে নিয়ে গেছে জানাতে গেলে এই বই পড়তেই হবে। লেখক সুচারু বর্ণনা, যুক্তিজাল ও সাবলীল ভাষায় পাঠককে সেই আদরের প্রবেশপথে আলো দেখান। প্রাচ্য-প্রতীচ্যের শৈলীবিজ্ঞানের আলোকে এই গ্রন্থের লেখক আঙ্গিক বিষয় ও ভাববস্তুর মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।
ড. বিভাবসু দত্ত (জন্মসাল ১৯৫৮ খ্রি.)। ভাষাবিজ্ঞান ও শৈলীশাস্ত্র সম্পর্কে স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী গবেষক ও প্রাবন্ধিক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে কুত্রির সঙ্গে এম.এ. ডিগ্রি অর্জনের পর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউ.জি.সি. টিচার ফেলো হিসেবে ‘বিদ্যাসাগর : ভাষা ও প্রচনাশৈলী’ এই বিষয়ে গবেষণা করে পি.এইচ.ডি. উপাধি প্রাপ্ত হন। তার ইতিপুর্বে প্রকাশিত গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘চলিত উপাদান : বিদ্যাসাগরের গদ্যে (১৯৯৮)’ বিশেষজ্ঞ মহলে প্রশংসা অর্জন করেছে। বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি জার্নাল ও অনুরূপ গবেষণাধর্মী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তার শ্রমনিষ্ঠ ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন প্রবন্ধ। আনন্দবাজার, সমতট, ধনধান্য প্রভৃতি দৈনিক এ সাময়িক পত্রে তাঁর রচনা-প্রকাশ ছিল নিয়মিত ঘটনা। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রবন্ধ ও আলোচনা তাঁর অন্বীক্ষু মনস্বিতার পরিচয়বাহী। মালদহ কলেজে কিছুকাল অধ্যাপনার পর বর্তমানে বনগ্রামের দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠদানের সঙ্গে সংযুক্ত।