অকাল বসন্ত ও অন্যান্য গল্প
- মৃণাল কান্তি দত্ত
এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ, তবু রঙ্গে ভরা। অবিভক্ত বাংলা ভেঙে যাওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার সন্তান মৃণাল কান্তি দত্ত, দেশভাগের পরে তার কর্মজীবন অতিবাহিত করেন পশ্চিমবাংলার মুর্শিদাবাদ জেলায়, অর্থনীতির অধ্যাপক ও পরে অধ্যক্ষ রূপে। ছাত্রজীবন কেটেছে ঢাকায়। বিচিত্র জীবন-অভিজ্ঞতা গল্প হয়ে উঠেছে তার হাতে, হয়েছে উপন্যাস। ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক দীর্ঘ সময় পরে জোড়া লেগেছে তার “অকাল বসন্ত” উপন্যাসে। তেমনি ‘ডাকাতে মেয়ে’ গল্পে প্রতিভাত হয়েছে নারীর ইতিবাচক স্বাতন্ত্র। ‘কুঁটো বাঁধা’ গল্পে একজন চিকিৎসক পেশার সূত্রেই খুঁজে পেয়েছেন মনের মানুষ। এক অধ্যাপক রজতের জীবন পূর্ণতা পায় ‘সমুদ্র সৈকত’ গল্পে তার ফেলে আসা জীবনের সঙ্গে গ্রন্থিবন্ধনে। একই রকম মিলনান্তক পরিণতিতে শেষ হয় ‘যার যেখানে ঘর’ গল্পটিও। “অকাল বসন্ত ও অন্যান্য গল্প” বইটির শেষ গল্প ‘বিসর্জন’এ বেজে যায় বিষাদের সুর। সব মিলে জীবনের মধুরে বিষাদে ভরে থাকে বইটির প্রতিটি ছত্র।
জন্ম বাংলাদেশের ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে ১৩৩১ বঙ্গাব্দে। তিনি ঢাকা শহরের কিশোরীলাল জুবিলি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ঢাকার জগন্নাথ হলের ছাত্র এরপর হলেন। অর্থনীতিতে সাম্মানিক স্নাতক। স্নাতকোত্তর পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশভাগের পর এপার বাংলায় মুর্শিদাবাদ জেলার। জিয়াগঞ্জ শহরের ‘শ্রীপৎ সিং কলেজ’এ অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু। পঠনপাঠন সহ সাংস্কৃতিক মত বিনিময়েও তিনি ছিলেন ছাত্রছাত্রীর পরম সুহৃদ। জিয়াগঞ্জ শহরের আর একটি কলেজ ‘রাণী ধন্যাকুমারী কলেজ অব কমার্স’এ এরপর অধ্যক্ষ পদে আসীন হন — সেখান থেকেই অবসর গ্রহণ। অধ্যক্ষরূপে কর্মজীবনে তিনি ছিলেন দক্ষ প্রশাসক, ছাত্রপ্রিয় শিক্ষক। সদা হাস্যময়, অমায়িক, স্নেহপ্রবণ, বাগ্মী এবং বামপন্থী ভাবধারায় পূর্ণ নিবেদিত ঋজু ব্যক্তিত্বের মানুষটি ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় এবং সর্বজন সমাদৃত।