বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনের প্রথম অধিবেশন ও রবীন্দ্রনাথ
- অমরনাথ করণ
স্বদেশি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথের প্রস্তাবে এবং সভাপতিত্বে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনে’র সূচনা। সম্মেলনে গৃহীত মূল্যবান প্রস্তাব সমূহ : প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে উদ্ধার ও সংরক্ষণ, বাংলার পুরাতত্ত্বের উপকরণ সংগ্রহ, বাংলার বিভিন্ন স্থানের চলিত ভাষার শব্দ ও তার প্রয়োগরীতি সংগ্রহ, বাংলা ভাষার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাকরণ ও অভিধান রচনা, বাংলার ভৌগোলিক তত্ত্ব সংগ্রহ। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলির বাস্তব রূপায়ণ। বাংলা সাহিত্যের সুদৃঢ় ভিত্তি রচনায় সম্মেলনের অবদান। সম্মেলনের সভাপতি পদে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক। এসব ছাড়া সম্মেলনে পঠিত শতাব্দি-প্রাচীন দুস্প্রাপ্য প্রবন্ধগুলি এবং সভাপতি রবীন্দ্রনাথের অগ্রস্থিত ভাষণ এই গ্রন্থের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ। “বাঙ্গালা সাহিত্যের বহু বয়োজ্যেষ্ঠ প্রবীণ নেতা থাকিতে শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে আমাদের ঘোরতর আপত্তি। রবীন্দ্রনাথ প্রভাবশালী কবি, সন্দেহ নাই; কিন্তু তিনি মহাত্মা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রীযুক্ত সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রীযুক্ত নবীনচন্দ্র সেন, শ্রীযুক্ত চন্দ্রনাথ বসু, শ্রীযুক্ত কালীপ্রসন্ন ঘোষ, শ্রীযুক্ত অক্ষয়চন্দ্র সরকার, শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, শ্রীযুক্ত শিবনাথ শাস্ত্রী প্রভৃতি সুধীজন হইতে কনিষ্ঠ ব্যক্তি। বহুদিন হইতে শুনিয়া আসিতেছি, রবীন্দ্রনাথ সভাপতি হইবেন। ইহাতে বোধ হয়, কোন এক দলের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করিবার জন্যই এই সম্মিলনের আয়োজন। কে জানে, এ কথা সত্য কি না?... রবীন্দ্রনাথ কি বঙ্গের কোন সাহিত্যরথীর জন্যই সভাপতিত্ব ছাড়িতে পারিতেন না? তিনি অল্প বয়স্ক, কত কতবার সভাপতি হইতে পারিতেন, কিন্তু প্রাচীনগণ আর কত দিন জীবিত থাকিবেন?” -‘নব্যভারত’ কার্তিক ১৩১৪, পৃ ৩৮৭।
জন্ম ২৩ নভেম্বর ১৯৫৩ পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং। স্কুল ও কলেজ জীবনের গণ্ডী পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্য কলকাতা আসা। বাংলা বিষয়ে এম.এ. পাশ ১৯৮২ সালে। রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন থেকে ১৯৮৩ সালে পি.জি.বি.টি. পাশ। শিক্ষকতা শুরু ১৯৮৪ সালে কলকাতার বেহালা পর্ণশ্রী বিদ্যামন্দিরে। ১৯৮৪ সালেই নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সদস্যপদ লাভ। শুরু হয় শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণার কাজ। ২০০০ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ’ বিষয়ে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ‘গীতা চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার’ অর্জন ২০১০ সালে। এই গ্রন্থ সাহিত্য সম্মেলনের গবেষণাকাজের একটি অন্যতম ফসল।