হুতোম প্যাঁচার নক্শা : নকশার আরশিতে
- মহুয়া ঘোষ
উনিশ শতকের নবজাগরণের ভোরে আলোকপ্রাপ্ত বাঙালি মণীষার অন্যতম ‘কালীপ্রসন্ন সিংহ’এর অবিনব সৃষ্টি ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’। চার্লস ডিকেন্সের ‘Sketches by Boz’ হুতোমের মূল অনুপ্রেরণা হলেও, পাশ্চাত্য সাহিত্যরীতি আত্মস্থ করে, সংবাদপত্রের চাহিদা পুরপের জন্য যে সংক্ষিপ্ত ব্যাঙাত্মক নকশা লেখক সৃষ্টি করলেন, তা বাংলা সাহিত্য ইতিপূর্বে দেখেনি। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর দাক্ষিণ্যে, শিক্ষা-সংস্কৃতি শুন্য, বংশকৌলিন্যহীন একশ্রেণীর হঠাৎ ধনী ‘বাবু’ সম্প্রদায়ের অধঃপতিত জীবনযাত্রার ফোটোগ্রাফিক ভাষারূপ এই নকশা। ভাবলে অবাক হতে হয়, যে কলকাতা রামমোহন-বিদ্যাসাগর-বেথুন-ডেভিড হেয়ারের কর্মভূমি, একই সময়ে সেই কলকাতাতেই বুলবুলির লড়াই, বেড়ালের বিয়ে, বাঈজী, বারাঙ্গনা, খেউড়, সং, দালাল, মোসাহেবের বাড়-বাড়ন্ত। আলোর বিপরীতে অন্ধকারের মত, উন্নত নিবীর্বতায় আচ্ছন্ন মেরুদণ্ডহীন বাঙালির এই কদর্য স্বরূপকে লেখক জীবন্ত করে তুলেছেন। নিজে বাবু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হয়েও আত্মসমালোচনা ও আত্মধিক্কারে শাসিত হয়েছেন। তাছাড়া, বাংলা গদ্যের ভবিষ্যৎ বাহন যে ‘চলিত ভাষা’ তাকেই কাশীপ্রসন্ন এই গ্রন্থে প্রতিষ্ঠা দিয়ে গেলেন। বিষয়, আঙ্গিক, ভাষারীতি—সমস্ত দিক থেকেই ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী দিক চিহ্ন, এক বলিষ্ঠ মাইলস্টোন।