নিজের মধ্যে, নিজের বাইরে
- পবিত্র সরকার
পবিত্র সরকারের একটা পরিচয় ভাষাবিজ্ঞানী ও ব্যাকরণকার, কিন্তু তিনি কত বিষয়ে যে লেখেন তার ইয়ত্তা নেই। ছোটোদের ছড়া, গল্প, ভ্রমণকাহিনি, রম্যরচনা, লোকসংস্কৃতি—ইত্যাদি অজস্র বিষয়ে তার আগ্রহ, এমনকি মৃত্যু বিষয়ে লিখতেও তার আতঙ্ক নেই। তার লেখার ভাষাও সাধারণের কাছে ভীতিপ্রদ নয়। এ বইটি তার অন্য এক পরিচয় তুলে ধরে, এটি সমাজমনস্ক পবিত্র সরকারের লেখা — জীবন ও সমাজের নানা জরুরি প্রসঙ্গের গভীর অনুসন্ধান ও আলোচনা। ‘এ জীবন নিয়ে কী করব’ –এই প্রশ্ন যেমন তাকে তাড়না করে, তেমনই কর্মনিষ্ঠা, শিক্ষার অধিকার, প্রজন্মবিচ্ছেদ, ধর্ম ও কুসংস্কার, নাস্তিকতা, পোশাক, ছাত্রছাত্রীদের শাস্তি — ইত্যাদি নানা বিষয়ে তার বিচার। কোনোটাই হেলাফেলা করে লেখা নয়। যে পাঠক সমাজ-প্রতিবেশ ও মানবনিষ্ঠ মননশীলতায় আগ্রহী—এ বই তার পাঠক্রমে অপরিহার্য।
পবিত্র সরকার নামক ঘটনাটির বর্ণনা করা খুব সহজ কাজ নয়। এক হল তাঁর শিক্ষাদীক্ষা ও অধ্যাপনার উজ্জ্বল র্জীবন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও এমএ-তে দু-বার প্রথম হওয়া, ফুলব্রাইট বৃত্তি পেয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিজ্ঞানে এমএ ও পিএইচ ডি করেছেন, যাদবপুরে পড়িয়েছেন প্রায় সাতাশ বছর, বিদেশে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে দু-বছর, এবং এখনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নানা কলেজে এমএ-র ক্লাস নিয়ে অক্লান্ত থাকছেন। রবীন্দ্র-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন সাত বছর, ছ-বছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিক্ষা সংসদের সহ-সভাপতি।
লেখাতেও অক্লান্ত ও বহুমুখী। ভাষাবিজ্ঞান ও ব্যাকরণ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব, লোকসংস্কৃতি, ইংরেজি শিক্ষা, রম্যরচনা, শিশুদের জন্য ছড়া গল্প উপন্যাস রবীন্দ্রসংগীত, আত্মজীবনকথা—সব মিলিয়ে তার নিজের বই সত্তরের উপর, সম্পাদিত পঞ্চান্নটির মতো। গান তার প্রিয় ব্যসন। এক সময়ে নান্দীকারে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় অভিনয়ও করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ এ ত্রিপুরা সরকারের একাধিক ভাষা-বিষয়ক কমিটি ও কমিশনের অধ্যক্ষ করেছেন। ‘মৃত্যু’ সম্বন্ধ লিখেছেন, কিন্তু এখনও দাপটে বেঁচে থাকার সাধনা করে যাচ্ছেন এই সতেজ মানুষটি।