রাঢ়ের ধর্মঠাকুর ও ঘনরামের ধর্মমঙ্গল
- ভবেশ মজুমদার
ধর্মঠাকুর যে অঞ্চল বিশেষে জাগ্রত দেবতা হিসাবে গৃহীত হয়েছিল তার প্রমাণ সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকের মধ্যে বু কবি ধর্মের মঙ্গলগান রচনা করেছিলেন। রাঢ় অঞ্চলের দেবতা ধর্মঠাকুর এবং তাকে কেন্দ্র করে রচিত ধর্মমঙ্গল কাবোর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ঘনরাম চক্রবর্তী । তিনি এই কাবোর সর্বাবিধ প্রচারিত কবিও। অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগে তিনি রাট় অঞ্চলের ডোম ও অন্যানা নিষ্নবর্গীয় সমাজের ছারা পুজিত মিশ্র দেবতা ধর্মঠাকুরকে নিয়ে কাব্য রচনা করেন। 'কবিরতু' ঘনরাম চক্রবর্তী তার কাব্যে রাঢ়-বাংলার জনজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী ধর্মঠাকুরের স্বরূপ, রাঢ় অঞ্ূলের সাধারণ মানুষের পরিচয়, তাদের আচার-বিশ্বাস-সংস্কারের নানা দিক, তাদের সরলতা-সতানিষ্ঠা ও বীরত্রর চিত্র অন্ন করেছেন নিপুন ভাবে। 'ঘনরাম শাস্ত্র-পুরাণাদিতে পণ্ডিত বাক্তি। গ্রাম্য স্থুলতা ও কুরুচি থেকে তার কাব্য মুক্ত_স্থচ্ছন্দ, সাবলীল ও পরিশীলিত। তার লক্ষ্য ছিল অষ্টাদশ শতকের অবক্ষয়ের যুগে যথাসম্ভব চরীত্রের সজীবতা রক্ষা করে জাতির চরিত্র গঠনের জন্য বলিষ্ঠ ও নৈতিক ধর্মে উন্নত পবিত্র শৌর্যবীর্ষের আদর্শ তুলে ধরা। রাঢের সমাজ ও ইতিহাসের দিক থেকে এ কাব্য মূল্যবান। ধর্মমঙ্গল কাবাধারায় ঘনরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাবা একটি উৎকৃষ্ট সমালোচনা গ্রন্থ হিসাবে পাঠক মহলে গ্রহণীয় পরিকক্গনা।
ড. ভবেশ মজুমদার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে হাজার ১৯৯৫ ও ১৯৯৭ সালে। উভয় ক্ষেত্রেই প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য মূলত তার আগ্রহের জায়গায়। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক তাপস বসুর তত্ত্বাবধানে মঙ্গলকাব্য-গবেষণা করেছেন।সুধীজন কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে তার "মঙ্গলকাব্য আর্য-অনার্য সংস্কৃতি সমন্বয়" গবেষণা কর্মটি। লোকসংস্কৃতির প্রতিও রয়েছে তার সমান ভালবাসা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি অর্থানুকূল্যে "গাছি সম্প্রদায় জীবন ও সংস্কৃতি" শিরোনামে অনু-গবেষণা করেছেন। বর্তমানে সুধিরঞ্জন লাহিড়ী মহাবিদ্যালয়ে (মাজদিয়া) সহযোগী অধ্যাপক পদে কর্মরত।