সতেরো শতকের রাঢ় বাংলার সমাজ ও সাহিত্য
- অণিমা মুখোপাধ্যায়
সাহিত্য-সূত্রে সমাজচিত্র অঙ্কনের কাজ আমাদের দেশে অবশ্যই নতুন নয়। কিন্তু ষোলো বা আঠারো শতকের ওপর এপর্যন্ত কিছু কাজ হয়ে থাকলেও, তুলনায় সতেরো শতক একেবারেই অবহলিত। কেউ কেউ একে মৌলিকতা বর্জিত ‘স্থিতিস্থাপনের কাল’ বলেও অভিহিত করেছেন। বর্তমান গ্রন্থটির বিশেষ মূল্য এই পরিপ্রেক্ষিতেই। এই গ্রন্থে শ্রীমতী মুখোপাধ্যায় সতেরো শতকে রাঢ়ে রচিত বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব-সাহিত্য, অনুবাদ-সাহিত্য, ইসলামি-সাহিত্য ইত্যাদির আলোচিত, স্বল্প-আলোচিত অথবা সম্পূর্ণ অনালোচিত পুঁথির পাতা ঘেঁটে রাঢ় বাংলার সমকালীন জীবন, সমাজ-সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিষয়ক সুবিপুল তথ্য সংকলন করেছেন এবং অন্যতর ইতিহাস গ্রন্থ, ভ্রমণ বৃত্তান্ত, সরকারী দলিল-দস্তাবেজ-চিঠিপত্র ও পূর্বসূরী গবেষকদের গবেষণার নিরিখে সেগুলির বিচার বিশ্লেষণ করে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। একটানা কয়েক বছরের নিরলস নিষ্ঠার ফসল এই গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ নি:শেষ হয়ে যাওয়ার র্দীর্ঘকাল পরে এই পরিমার্জিত ও পরিবর্দ্ধিত দ্বিৰ্ত্তীয় সংস্করণ। আশাকরি গবেষক ও সপিপাসু পাঠকের কাছে পূর্বের মতোই এ গ্রন্থ গণ্য হবে এক মূল্যবান সংগ্রহ হিসেবে।
প্রাচীন বাংলা পুঁথির কীটদষ্ট পাতা ঘেঁটে বাংলার সমাজ ও ইতিহাস চর্চায় নিরত অতি মুষ্টিমেয়-র অন্যতম ডক্টর অণিমা মুখোপাধ্যায়। পুঁথি গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর রচনা এবং গ্রন্থানি ইতিমধ্যেই পণ্ডিতজনের সমাদর লান্ত করেছে। বিশ্বভারী রিসার্চ জার্নাল, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা জাতীয় নিছক গবেষণা পত্রিকাগুলিতে ছাড়াও ‘দেশ’, ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’, ‘অমৃত", ‘বসুমতী’, ‘বর্তমান’, ‘কলেজস্ট্রীট’, ‘পশ্চিমবঙ্গ’, ‘অনুষ্টুপ’, ‘অব্যয়’, ‘আন্তর্জাতিক পাঠশালা’ ইত্যাদি পত্রপত্রিকা গুলিতে শ্ৰীমতী মুখোপাধ্যায় নিয়মিত লিখেছেন এবং লিখছেন। জন্ম : মার্চ ১৯৪৩ সাল। বরিশালের গৈলা গ্রামে। শৈশব থেকেই কলকাতায়। ১৯৬৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ.। বিশ্বভারতীর পি.এইচ.ড়ি. ১৯৭৯ সালে। ১৯৮৩-৮৮ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উচ্চতর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুঁথি বিভাগের সঙ্গেও কিছুকাল যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে শান্তিনিকেতনে স্থায়ীভাবে থেকে নিরলস পুঁথি সংক্রান্ত বিদ্যাচর্চায় নিমগ্ন আছেন।