আমি র-ঘরানার কবি
- রাজীব ঘোষ
দেশ রাগ থেকেই ‘র’-এর দীপ্ত দৃষ্টি কবি মনকে তোলপাড় করেছে, আর সেই রস উজাড় করে ঢেলে দিয়েছেন সৃষ্টির উল্লাসে। জীবন যন্ত্রনার পাশাপাশি রোমান্টিকতাকেও সদ্য ফোটা ফুলের মতো ফুটিয়েছেন। এক অভাগী নারী কবিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে প্রশ্নের বাণ ছুঁড়ে দেয়—“শুনতে পাচ্ছেন ভদ্রলোক শিশুর কান্নার শব্দ। / পারবেন অবাঞ্ছিত ছেলের মা হওয়া থেকে বঞ্চিত করতে? / পারবেন চন্দ্রাভূক পুরুষ— / লকলকে জিভ আর উত্তেজনার থাবাকে সমঝে রাখতে?” যন্ত্রনায় ক্ষতবিক্ষত হয় কবিমন। এরই উল্টোদিকে রাজীব দেখিয়েছেন আর এক চিত্র। যা দেখতে – শুনতে এ সমাজ মোটেই অভ্যস্ত নয়। কবি নিজে একদিন মায়াজালে আটকে পড়ে সরাসরি কৃষ্ণকে প্রশ্ন করলেন — “আমি সন্তানের পিতা হয়েও বাবা হবার গৌরব থেকে বঞ্চিত। / মহাভারতের ছলনাময়ী সারথী বাসুদেব — তাও কি মায়া ?’ এই প্রশ্ন শুধুই কি কবির? এই জগৎ সংসারে নিঃস্বার্থে সর্বস্ব অর্পণ করা পুরুষটির তখনই ঘটে অণুমরণ। নিজেকে রাবণের মতো নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ মনে করা ছাড়া আর কিছুই থাকেনা।
রাজীবের কবিতাগুলির বিশেষত্ব হচ্ছে এর চিত্রময়তা,যা বিচ্ছিন্ন তুলির টানে আঁকা, ভাবের ছোট ছোট মাত্রায় রচিত। কবিতার এক একটি শব্দ বিন্যাসে তৈরী হয়েছে আত্মকথনের সার্বিক মুহুর্ত।
জন্ম ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রাঙ্গামাটির দেশ গড়বেতার প্রত্যন্ত গ্রামে। গানের আবহেই বড় হয়ে ওঠা। শিলাবতী নদীর বহতা ধারার সিগ্ধতায় কবিতার জন্যই কলম ধরেছেন কবি এক অনুচ্চ ভালোবাসা ও বিশ্বাসে। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু, পরে একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক ও নেভিতে যোগদান। বর্তমানে ‘ক্যামেলিয়া’ সাহিত্য পত্রিকাটির সম্পাদনায় নিমগ্ন। গল্প এবং কবিতায় একাত্ম তাঁর সংবেদনশীল হৃদয় ও মনন। শূন্য দশকেৱকবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ “আমি র-ঘরানার কবি” প্ৰকাশিত হয় ২০১৬ সালে। বর্তমানে চিত্রনাট্য লেখার কাজেও হাত দিয়েছেন। সাহিত্য জগতে রাজীব ঘোষ একটি পরিচিত নাম।