কবির গদ্য
- আণবিক গঙ্গোপাধ্যায়
জীবনের প্রারম্ভে কবি হয়ে ওঠার বাসনার পাশাপাশি স্থান দিয়েছেন গদ্য রচনাকে। কবি তার বহুকালের। প্রেয়সী’, তবু সত্যি হল এই যে, তার গদ্যসৃষ্টি কবিতার চেয়ে অধিক। বঙ্কিামের গদ্যে প্রভাবিত হয়েও বুঝালেন। এ-ভাষাকে মুখের ভাষার কাছাকাছি না। আনতে পারলে সংস্কৃত পণ্ডিতের শাসন মিশনারিদের তৈরি এই ‘গড়াপেটা’ ভাষা-র রিজিনাল সিন’ থেকে মুক্তি নেই, তাই গােরা-জীবনস্মৃতি পর্বে তার গদ্য বাংলা-গদের ইতিহাসে। পরামর্ষে পৌছানো সত্ত্বেও কবি তা পরিত্যাগ করলেন। সবুজপত্র পর্ব থেকে গদ্যে কবি চিরদিনের মতো চলিত রীতির শৈলীকে গ্রহণ করলেন; শব্দ চয়নেও। দেখা গেল বিস্ময়কর ভিন্নরুচির প্রশ্রয়। শেষের কবিতার মতো সচেতন রীতি-বিলাস নয়, কবিতার শরীরে, লিপিকার কথিকাতে দেখা দিল গদ্যের নতুন মুখ; ১৮৭৬-১৯৪১ এই ছেষট্টি বছরের গদ্য চর্চায় বাংলা-গদ্যকে পরম-স্থানাঙ্ক পৌছে দিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ। সেই কৈশোর থেকে জীবনের শেষ গদ্যরচনা পর্যন্ত কবির গদ্যে যে বিবর্তন চিত্র—তারই আলোচনা এই গ্রন্থ।
কবির গদ্য
মানচিত্রের রঙিন ভূ-খণ্ড গুলি নড়ে চড়ে বসে ক্যালিডোস্কোপের কাঁচের টুকরেরা মতো – তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় মানবজমিনের গোলাভরা ফসলের ভবিষ্যৎ। দেশভাগের বহু বহু আগেই বাংলা এপার-ওপারে চিহ্নিত হতে শুরু করেছিল... সেই অমীমাংসিত স্বদেশ পরিচয় নিয়েই যারা ভারতের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক, আণবিকা তাদের একজন।
আগের প্রজন্ম ঢাকা থেকে বরাবরের মতো এদেশে চলে আসেন দেশভাগের একদশক আগেই। বাবা ছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর কর্মী, সেই সুত্রে সারা ভারতই ছিল অস্থায়ী ঠিকানার বসবাস। জন্ম কলাইকুণ্ডায়, অতি শৈশব উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। এরপর মায়ের তত্ত্বাবধানে স্থায়ী ঠিকানা উত্তর চব্বিশ পরগনা। স্কুলের পড়া রহড়া ভবনাথ ইন্সটিটিউশনে, কলেজ ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন এবং পরের পড়াশুনো কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাইশ বছর ধরে বর্তমান ঠিকানা কোলকাতা। স্বদেশ সন্ধানের মতো স্বধর্ম সন্ধানে নাস্তিকতায় একদিন আত্মপরিচয় খুঁজে পাওয়া, তাই এই বিশ্ব যেখানে স্বদেশ মানবতা যেখানে স্বধর্ম সেই শান্তিনিকেতন হয়ে ওঠে একাধারে আকাশ আর নীড়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন যে মানুষটি, গীতাঞ্জলি-গীতবিতানের অনন্ত ভুবনডাঙায় তিনি রেখে গেছেন বাঙালীর নিশ্চিন্ত আশ্রয়, অনিকেত চেতনার অবসান। পূর্ব দিগন্ত সেখানে জ্যোতির্ময় আবির্ভাবে চির ভাস্বর হয়ে আছে।
জীবনের গৌরবময় অর্জন : কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ।
কবি হবার স্বপ্ন কোনোদিন না দেখলেও, একমাত্র প্রকাশিত বইটি - ‘একান্ত যা ব্যক্তিগত’—কাব্যগ্রন্থ-ই।