ম্যানিকিনের জীবনদর্শন
- আণবিক গঙ্গোপাধ্যায়
বিপ্লব চেয়ে দোষী হয়ে যায় যেন কারা। শহর জোড়া কৃষ্ণচূড়ার মাতনে রক্তের ছোপ লেগে যায়। খাতার পাতায় বিক্ষোভ অনূদিত হয়। স্বপ্নগুলো নাছোড় হয়ে ঝুলে থাকে মনের কোণে। কবি লেখেন—“মৃত্যু এক উপত্যকা পথ / মৃত্যু এক জীবনের গান / জীবনের সব কোলাহল এই শব্দে এসে থেমে যায়। / ..সালুকরা মরে পড়ে থাকে / মা-ও পায় না তাকে, স্ত্রী নয় পুত্র নয়। মৃত্যু তবু যবনিকা নয়।” হয়ত নয়! তবুও তো জন্মচিহ্ন খুঁজে চলে আজন্ম কোনো সত্যকাম। স্মৃতির তীর ধরে কারা যেন ডাক পাঠায় ঘরে ফেরার। এভাবেই অপচয়, আক্ষেপ, প্রতিরোধ আর পূর্ণতা নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে কবিতা ঘেরা জীবনের এই বায়োস্কোপ।
কবির গদ্য
মানচিত্রের রঙিন ভূ-খণ্ড গুলি নড়ে চড়ে বসে ক্যালিডোস্কোপের কাঁচের টুকরেরা মতো – তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় মানবজমিনের গোলাভরা ফসলের ভবিষ্যৎ। দেশভাগের বহু বহু আগেই বাংলা এপার-ওপারে চিহ্নিত হতে শুরু করেছিল... সেই অমীমাংসিত স্বদেশ পরিচয় নিয়েই যারা ভারতের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক, আণবিকা তাদের একজন।
আগের প্রজন্ম ঢাকা থেকে বরাবরের মতো এদেশে চলে আসেন দেশভাগের একদশক আগেই। বাবা ছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর কর্মী, সেই সুত্রে সারা ভারতই ছিল অস্থায়ী ঠিকানার বসবাস। জন্ম কলাইকুণ্ডায়, অতি শৈশব উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। এরপর মায়ের তত্ত্বাবধানে স্থায়ী ঠিকানা উত্তর চব্বিশ পরগনা। স্কুলের পড়া রহড়া ভবনাথ ইন্সটিটিউশনে, কলেজ ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন এবং পরের পড়াশুনো কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাইশ বছর ধরে বর্তমান ঠিকানা কোলকাতা। স্বদেশ সন্ধানের মতো স্বধর্ম সন্ধানে নাস্তিকতায় একদিন আত্মপরিচয় খুঁজে পাওয়া, তাই এই বিশ্ব যেখানে স্বদেশ মানবতা যেখানে স্বধর্ম সেই শান্তিনিকেতন হয়ে ওঠে একাধারে আকাশ আর নীড়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন যে মানুষটি, গীতাঞ্জলি-গীতবিতানের অনন্ত ভুবনডাঙায় তিনি রেখে গেছেন বাঙালীর নিশ্চিন্ত আশ্রয়, অনিকেত চেতনার অবসান। পূর্ব দিগন্ত সেখানে জ্যোতির্ময় আবির্ভাবে চির ভাস্বর হয়ে আছে।
জীবনের গৌরবময় অর্জন : কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ।
কবি হবার স্বপ্ন কোনোদিন না দেখলেও, একমাত্র প্রকাশিত বইটি - ‘একান্ত যা ব্যক্তিগত’—কাব্যগ্রন্থ-ই।