মহাশ্বেতার গল্পে নারী
- বিনীতা রাণী দাস
মহাশ্বেতা দেবী বাংলা সাহিত্যে নতুন গতিপথ নির্ণয় করেছেন। কথাসাহিত্য যেখানে একসময় রোমান্টিক ভাববিলাসে নিমগ্ন ছিল সেখানে মহাশ্বেতা নিয়ে এসেছেন কঠোর বাস্তবকে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তার এই যাত্রা। সমাজের সকল স্তরেই মহাশ্বেতার অবাধ বিচরণ ছিল। সুষ্ঠু সংস্কৃতিসম্পন্ন সামাজিক পরিবেশ পেয়েছেন জন্মসূত্রে, পরিচিত চারপাশে দেখেছেন ভালোমন্দ-মেশানো মধ্যবিত্ত সমাজজীবন আর কর্মসূত্রে হৃদয়ের টানে তার ঘনিষ্ঠ সংযোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে নিম্নবর্গের মানুষদের সঙ্গে। তাই তাঁর গল্পে তিনি যে নারীচরিত্র অঙ্কন করেছেন সেগুলো বাস্তবের নিবিড় সান্নিধ্যে হয়ে উঠেছে জীবননিষ্ঠ ও লেখকের প্রতিভাগুণে লাভ করেছে রসাভিব্যক্তির চরমোৎকর্ষ। তাঁর গল্পে নারী ভূমিকা পালন করেনি, বাস্তব সমাজের প্রেক্ষাপটে নিজস্ব জীবনবোধে নবনির্মিত হয়েছে। স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা-নিষ্ঠুরতা- প্রতিবাদ-স্বাধীন জীবিকাবৃত্তি গ্রহণের স্বতঃস্ফূর্ততা — সবকিছুতেই মহাশ্বেতার নারী উজ্জ্বল। নারীর দারিদ্র ও বারবধূ হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনিতে রয়েছে দায়িত্ববোধহীন রাষ্ট্র ও অর্থগৃধু মানুষের প্রতি লেখকের তীব্র ব্যঙ্গের কষাঘাত। মহাশ্বেতার গল্পের নারীর এই বিচিত্র অবস্থানকে ধরার প্রয়াস রইল এখানে।
জন্ম ১৯৭০, অসমের শিলচর শহরের নিকটবর্তী শালচাপড়ার বর্ণিরপার গ্রামে। স্নাতক স্তরে শিলচরের কাছাড় কলেজের বাংলা বিভাগের কৃতী ছাত্রী ছিলেন ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। এই একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস নিয়ে গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি পান। অধ্যাপনা-জীবন শুরু শিলচরের নিকটবর্তী কাবুগঞ্জের জনতা কলেজে। বর্তমানে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘বিবর্তিত নারীসত্তা : আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাসে নারী’। উপন্যাস ও ছোটগল্পের বিষয়বস্তুর গভীরতা অনুসন্ধানে তাঁর প্রবল আগ্রহ। পত্র পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখেন। লেখার বিষয়ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপন্যাস ও গল্পের আলোচনা। প্রিয় শখ পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া ও বই পড়া।