মুর্শিদাবাদের ইতিহাস : গ্রাম ও গড়ন
- তাজউদ্দিন বিশ্বাস
বাঙ্গালীজাতি ও তার সভ্যতার বিকাশ গ্রাম বিকাশের ধারা থেকে। গ্রামের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, বাঙালীজাতি সত্তার অঙ্গনে মৌলিক ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং বাংলার এলাকাওয়ারী বিচারে পার্থক্যযুক্ত। এই পার্থক্যযুক্ত বিশিষ্টতা ও মেলিকতা কিন্তু সেভাবে আলোচিত হয়নি। স্বাধিনত্তর কালে এলাকা ভিত্তিক ইতিহাস লেখার প্রবণতা বাড়লেও বাড়েনি গ্রামের ইতিহাস লেখার প্রবণতা। প্রথম উদ্যোগ লক্ষ করা যায় ‘পশ্চিমবলেম পূজা-পার্বন ও মেলা’ গ্রন্থে। জেলাওয়ারী গ্রামের বৃত্তান্ত তুলে ধরা থেকে। মুর্শিদাবাদ জেলার ২৭৩ টি গ্রাম্যমেলার সংপ্তিপ্ত, ১৩৫ মেলার বিস্তারিত বিবরণসহ ২০৩ টি গ্রাম সন্নিবেশিত হয়েছে এই গ্রন্থে। এরও ৪০ বছর পর ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকা গোষ্ঠী গ্রাম ধরে ধরে কিছু কাজ করেছেন। তাজউদ্দিন বিশ্বাস অষাড়তার প্রথা ভেঙে ইতিহাসের আলোকে ২২৮৯ টি মৌজায় উৎপত্তিগত কারণের নিরিখে বিকাশ ও বিস্তৃতি এবং শহরে রূপান্তর বিশদভাবে পরিবেশন করেছেন। লেখকের ‘মুর্শিদাবাদের ইতিহাস : গ্রাম ও গড়ন’ মুর্শিদাবাদ জেলার বর্তমান ২২৮৯ খানি মৌজার ক্ষেত্র সমীক্ষাও অক্লাক্ত পরিশ্রমের ফল।
মুর্শিদাবাদ-বাগড়ীর নীলচাষ প্রসুত কৃষক অভ্যুত্থান তথা আন্দোলনের অবিসংবাদী সংগঠক ও অন্যতম নেতা পণ্ডিত রইসুদ্দিনের উত্তরসুরী এই গ্রন্থকার। মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল থানার ফতেপুর গ্রামে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মে জন্মগ্রহণ করেন। বড় হয়েছেন ওই গ্রামেই। বর্তমানে বসবাস করেন ডোমকলে। লেখালিখির জগতে না থাকলেও তাকে গ্রন্থকার হিসেবে দেখা যায় ২০১৪ তে ‘মুর্শিদাবাদ জেলায় কমিউনিস্ট নেতৃত্বের সম্পর্ক’ গ্রন্থ প্রকাশে। ওই গ্রন্থে গ্রন্থকার অক্লান্ত পরিশ্রমে ফেলার রাজনৈতিক কোন্দলের ও সমালোচকদের মিথ্যাচারের বাইরে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বৌদ্ধিক সম্পর্কে দাঁড় করিয়েছেন। ২০১৬ তে প্রকাশিত ‘মুর্শিদাবাদের ইতিহাস : পরগণা গোয়াস’ প্রস্থ লুপ্তির দিকে ধাবিত, বিস্মৃতির অম্ভরালের পথযাত্রী একটা জনপদকে ঘিরে তথ্য দিয়ে উদ্ভাসিত করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মুর্শিদাবাদের নতুন ইতিহাস।