মুর্শিদাবাদের ইতিহাস পরগণা গোয়াস
- তাজউদ্দিন বিশ্বাস
মুনসেফ হাকিম শ্যামধন মুখোপাধ্যায় গোয়াস আদালতে কর্মরত থাকা অবস্থায় মাতৃভাষায় রচনা করেন মুশিদাবাদের ইতিহাস এবং বহরমপুরে কর্মকালে সেই ইতিহাস বহরমপুর শহর থেকেই ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে পুস্তক আকারে জনসমক্ষে আসে। এই মুর্শিদাবাদের ইতিহাস দিয়েই শুরু হয় একদিকে স্বদেশের ইতিহাস লেখার ধারা, অপরদিকে প্রবণতা বাড়ে মাতৃ ভাষায় আঞ্চলিক ইতিহাস লেখায়। ক্রমান্বয়ে নবাবী আমলের চেনা রাজকীয় ইতিহাসের পাশাপাশি শুরু হয় জনগোষ্ঠীর সমাজবদ্ধ জীবনের সার্বিক ইতিহাস রচনার প্রবণতা। মুর্শিদাবাদ জেলা তথা জেলাঞ্চলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে রাজনৈতিক উত্থান পতনকে অঙ্গাঙ্গী করার প্রবণতাও বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে মুর্শিদাবাদকে নতুন রূপে নতুন বিষয়ের শরীক করে জনসমক্ষে নিয়ে আসার পালা। মুর্শিদাবাদকে এতকাল যে ভাবে, যে আদলে চেনানো হয়েছে, সেই চেনা পরিচিতির, সেই ধ্যান-ধারণার, সেই প্রবণতার হাত ধরেই লেখক আরও এক নতুন বিষয় সহযোগে সচেষ্ট হয়েছেন মুর্শিদাবাদকে চেনাতে। ‘গোয়াস’ নামের একটি জনপদ আবর্তিত ইতিহাস-ভূগোল, সমাজ-সংস্কৃতির প্রথা। বিবহির্ভুত বিষয় দিয়ে চেনা মুর্শিদাবাদের অচেনা ধারা চিনিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন এবং বিভিন্ন সময়ের নকশা ও নথি দিয়ে চিনিয়েছেন অজানা অচেনা বিষয়কে।
মুর্শিদাবাদ-বাগড়ীর নীলচাষ প্রসুত কৃষক অভ্যুত্থান তথা আন্দোলনের অবিসংবাদী সংগঠক ও অন্যতম নেতা পণ্ডিত রইসুদ্দিনের উত্তরসুরী এই গ্রন্থকার। মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল থানার ফতেপুর গ্রামে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মে জন্মগ্রহণ করেন। বড় হয়েছেন ওই গ্রামেই। বর্তমানে বসবাস করেন ডোমকলে। লেখালিখির জগতে না থাকলেও তাকে গ্রন্থকার হিসেবে দেখা যায় ২০১৪ তে ‘মুর্শিদাবাদ জেলায় কমিউনিস্ট নেতৃত্বের সম্পর্ক’ গ্রন্থ প্রকাশে। ওই গ্রন্থে গ্রন্থকার অক্লান্ত পরিশ্রমে ফেলার রাজনৈতিক কোন্দলের ও সমালোচকদের মিথ্যাচারের বাইরে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বৌদ্ধিক সম্পর্কে দাঁড় করিয়েছেন। ২০১৬ তে প্রকাশিত ‘মুর্শিদাবাদের ইতিহাস : পরগণা গোয়াস’ প্রস্থ লুপ্তির দিকে ধাবিত, বিস্মৃতির অম্ভরালের পথযাত্রী একটা জনপদকে ঘিরে তথ্য দিয়ে উদ্ভাসিত করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মুর্শিদাবাদের নতুন ইতিহাস।