মানভূমের নাচনি ও রসিক
- ক্ষীরোদ চন্দ্র মাহাতো
'নাচনি” সাবেক মানভূমের একটি বিশিষ্ট লোকনৃত্য। অবশ্য, এই লোকনৃত্যের লাগোয়া ঝাড়খণ্ড অঞ্চলের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার বহুদূর পর্যন্ত লক্ষ করা যায়। তবে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাবেক মানভূমের জনমানসেই “নাচনি” নাচের প্রভাব সব চাইতে বেশী। “নাচনি” দের সঙ্গে আর একজন মানুষের জীবন সংযুক্ত হয়ে থাকে, যিনি হচ্ছেন গান-ঝুমৈর জানা একজন “ফুর্ত্যাল মানুষ--'রসিক”। রিঝে-রঙে-রসে ভরপুর একজন “রসিক”ই ছলে-বলে-কৌশলে নীতিতে সমাজের নিরনশ্রেণীর উঠতি যুবতী মেয়েদের ঘর থেকে বের করে নিজের হেপাজতে রেখে নাচ-গান-ঝুমৈর তালিম দিয়ে 'নাচনি' করে তোলেন । প্রশিক্ষণ পর্ব সমাপন হলে 'নাচনি” কে নিয়ে “রসিক” নাচের আসরে যৌথ নৃত্য পরিবেশন করে থাকেন। সেই নাচে ফুটে ওঠে রাধাকৃষ্ণ খযুগলাঙঈগী” ভাব। 'নাচনি'- রাধা, “রসিক” কৃষ্ণ। 'নাচনি” ছাড়া 'রসিক” অচল; “রসিক” বিনে 'নাচনি” 'মণিহারা ফণী”। এতদঞ্চলের জনপ্রিয় এই লোকনৃত্যটির প্রকৃত স্বরূপ সন্ধানের প্রয়াস করা হয়েছে বন্ষ্যমাণ গ্রন্থটিতে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনার পাশাপাশি সাবেক মানভূম তথা ঝাড়খণ্ডের লোকজীবন, লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি চর্চায় ব্যাপৃত আছেন। বিশেষ করে, মানভূমের হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন সংস্কৃতি-লোকবাদ্য-লোকআয়ুধ-লোকতৈজসপত্র, যেগুলিতে পরম্পরাগত লোকজীবনের ‘লুইড়’ (technique) ও ‘ভাঁওর’ (Knowledge) -র ছাপ থাকত, সেই সব লোকপ্রযুক্তি (FolkTechnology)-র পরিচয় তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করে বিদ্বজ্জন মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এ জন্য তিনি ২০০০ সালে 'Statesman Award for Rural Reporting' সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরের বিভিন্ন আলোচনা চক্রে পঠিত তাঁর মানভূম সংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধগুলি উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে।