আখ্যানের সাতকাহন
- তপোধীর ভট্টাচার্য
মানুষের সমস্ত শিল্পই সময়-শাসিত। সময়ের স্বর যখন যেমন বদলায়, অভিব্যক্তির ধরনও নিশ্চিতভাবে বদলে যেতে থাকে। গল্প তৈরি করা সুদূর অতীত থেকেই মানুষের সহজাত প্রবণতা। সেইসঙ্গে গল্প যেন দর্পণ যা দিয়ে নিজের ভেতর আর বাহিরকে নতুনভাবে চেনা যায়, বোঝা যায়। কখনও মহাকাব্যে কখনও বা বিভিন্ন রকমের আখ্যানকাব্যে বাস্তব ও কল্পনার যুগলবন্দি দেখা যায়। কালের মাত্রান্তর ঘটল যখন, উপন্যাস হয়ে উঠল পড়ুয়ার প্রিয় চারণভূমি। কিন্তু দ্রুত বিবর্তনশীল বিশ্বপ্রেক্ষিতে কোনো কিছু স্থির নয় বলে ক্রমশ উপন্যাসও আর সর্ববহনক্ষম আধার রইল না। বরং আধেয় ও চাহিদার পেষণে ফেটে চৌচির হয়ে গেল উপন্যাসের ঐ অতিপরিচিত আধার। পৃথিবীর নানা প্রান্তে জাতীয় স্বভাবের অনন্য দাবিতে নভেলা বা ফিকশনের অভ্যস্ত সংরূপ ধীরে ধীরে ঝাপসা হতে লাগল। একসময় বাংলা সাহিত্যেও পৌছাল বিনির্মাণের বার্তা। আধিপত্যবাদী সাংস্কৃতিক রাজনীতির আয়ুধ হিসেবে অতি-উৎপাদিত পণ্যসাহিত্য বা পপুলার বেস্টসেলারদের গড্ডলিকাস্রোতে ভেসে না-গিয়ে যারা আখ্যানের নতুন ধরন খুঁজলেন লেখায় এবং অনুশীলনে - তাঁদের প্রতি অভিনিবেশ সম্প্রতি শুরু হয়েছে আমাদের। সাহিত্যেও এসময়ের অগ্রণী সাহিত্যতাত্ত্বিক ও সমালোচক তপোধীর ভট্টাচার্য তার আখ্যান-ভাবনার নিদর্শন পেশ করেছেস এই সংকলনে।
এ-সময়ের পুরোধা সাহিত্যিতাত্তিক ও সমালোচক তপোধীর ভট্টাচার্য (জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯) বাংলা সাহিত্যের যশস্বী চিন্তাবিদ। বাঙালির নিজস্ব নন্দনতত্ত্ব হিসেবে উত্তর আধুনিক চেতনার অন্যতম প্রস্তাবক তিনি। এখনও পর্যন্ত তাঁর ১৩৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘তুমি সেই পীড়িত কুসুম’ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। মোট ৩২ টি কবিতা-সংকলন তাঁর রয়েছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কার্যদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এছাড়া দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাবান রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করছেন। ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এমেরিটাস অধ্যাপকও। নিরন্তর মনন-চৰ্চা করাই তাঁর জীবনের ব্রত। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : প্রতীচ্যের সাহিত্যতত্ত্ব, ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণ, আধুনিকতা : পর্ব থেকে পর্বান্তর, বাখতিন তত্ত্ব ও প্রয়োগ, ছোটগল্পের সুলুক-সন্ধান, উপন্যাসের সময়, উপন্যাসের বিনির্মাণ, কবিতার রূপান্তর, কবিতা : নন্দন ও সময় প্রভৃতি।