অসীমের চিরবিস্ময়
- তপোধীর ভট্টাচার্য
তাই তুমি নিজে এসেছ নিচে / আমায় নইল ত্রিভুবনেশ্বর / তোমার প্রেম হত যে মিছে : এরকম লিখেছিলেন তিনি। আরও লিখেছিলেন : আমার চেতনার রঙে পান্না হলো সবুজ / চুনি উঠল রাঙা হয়ে। বাণীর যত মাধ্যম আছে, তাদের মধ্যে অনুরণিত হয়েছে তার সৃষ্টির অন্তহীন আনন্দ। বাণী পেরিয়ে যেখানে রূপ ও রেখা ছবি হয়ে ওঠে, সুরের বৈভব হয়ে ওঠে গান : সেখানে তার অগাধ সঞ্চরণ তিনি রবীন্দ্রনাথ। শতবর্ষ পেরিয়ে সার্ধশত বছরও পেরিয়ে এসেছি আমরা। তবু অসীমের চিরবিস্ময় সম্পর্কে আগ্রহ ফুরোয় না আমাদের। এই নিবন্ধ সংকলনে ছোট-বড় বয়ানে খচিত হয়েছে রবীন্দ্র-মননে ও সৃজনে অবগাহনের আনন্দ। প্রখ্যাত তাত্ত্বিক ও সমালোচক তপোধীর ভট্টাচার্যের সংবেদনশীল গদ্যে অর্ঘ্য নিবেদিত হয়েছে যুগাতিযায়ী স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথের প্রতি। পাঠক এই বইতে ভাবুক ও কর্মযোগী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সৃষ্টি-তন্ময় কবিমনীষী রবীন্দ্রনাথের আশ্চর্য মেলবন্ধন লক্ষ করবেন – এই আমাদের বিশ্বাস।
এ-সময়ের পুরোধা সাহিত্যিতাত্তিক ও সমালোচক তপোধীর ভট্টাচার্য (জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯) বাংলা সাহিত্যের যশস্বী চিন্তাবিদ। বাঙালির নিজস্ব নন্দনতত্ত্ব হিসেবে উত্তর আধুনিক চেতনার অন্যতম প্রস্তাবক তিনি। এখনও পর্যন্ত তাঁর ১৩৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘তুমি সেই পীড়িত কুসুম’ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। মোট ৩২ টি কবিতা-সংকলন তাঁর রয়েছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কার্যদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এছাড়া দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাবান রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করছেন। ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এমেরিটাস অধ্যাপকও। নিরন্তর মনন-চৰ্চা করাই তাঁর জীবনের ব্রত। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : প্রতীচ্যের সাহিত্যতত্ত্ব, ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণ, আধুনিকতা : পর্ব থেকে পর্বান্তর, বাখতিন তত্ত্ব ও প্রয়োগ, ছোটগল্পের সুলুক-সন্ধান, উপন্যাসের সময়, উপন্যাসের বিনির্মাণ, কবিতার রূপান্তর, কবিতা : নন্দন ও সময় প্রভৃতি।