সাম্প্রদায়িকতা ও রবীন্দ্রনাথ
- কৃষ্ণগোপাল রায়
ভারতীয় জনসংহতির পক্ষে সাম্প্রদায়িকতা একটি অতি পুরনো এবং সাংঘাতিক দুর্বলতা। এ দুর্বলতা চিরতরে কাটিয়ে ওঠা ভারতবাসীরই দায়, অন্যথায় রাষ্ট্রশক্তি কায়েম করতে ওই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শনি যাবে তো রাহু আসবে; জাতীয় সুসংহতি থেকে যাবে অনায়ত্ত। আধুনিক ভারতের চিনস্তানায়কদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথই এই সত্য উপলব্ধি করেছিলেন সম্যকরূপে এবং কেবল তাত্ত্বিক উপলব্ধিতে আটকে না থেকে প্রবলভাবে সক্রিয় হয়েছিলেন সাম্প্রদায়িকতা উন্মূলনে। সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ নির্ণয়, তার উত্তব ও বিকাশের অবকাশ - আশ্রয় ও গতিপ্রকৃতি সনাক্তিকরণ, আবার তার স্থায়ী নির্মূলীকরণের পন্থা নির্ধারণে জীবনের অর্ধাংশ সময় জুড়ে তিনি ছিলেন অরুস্ত। প্রবন্ধের পর প্রবন্ধে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন, চিঠিপত্র লিখেছেন, ভাষণ বলিষ্ঠ ভাবে; তার কিছু গল্প-কবিতা-এমনকি উপন্যাসেও এসেছে এ প্রসঙ্গ। তবে কোনো সময়েই রাজনীতির শুষ্কদৃষ্টিতে বিষয়টিকে তিনি দেখেননি, দেখেছেন একজন মহৎ মানবপ্রেমিকের দায়বোধ থেকে । এ গ্রন্থে লেখক রবীন্দ্রনাথের সেইসব বহছকৌণিক নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেছেন। রবীন্দ্রানুরাগী, এ বইটি তাদের সকলেরই অবশ্যপাঠ্য।
সাহিত্য সমালোচনা ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ ড. কৃষ্ণগোপাল রায় সুপরিচিত নাম। দেশে-বিদেশে অসংখ্য তাঁর গুণমুগ্ধ পাঠক। অধ্যাপনার যশস্বী, মননে নিবিড়, আর লেখার ক্ষেত্রে যেমন বিশ্লেষণী তেমনই শুদ্ধতাবাণী। প্রশ্নের পর প্রশ্ন তুলে তাদেরই নিরাকরণ করতে করতে তিনি পৌছান সিদ্ধান্তে।
‘রবীন্দ্র-কথাসাহিত্য :আপেক্ষিত প্রসঙ্গ’, ‘সাম্প্রদায়িকতা ও রবীন্দ্রনাথ’, ‘জীবনানন্দের কাব্যে পাশ্চাত্য প্রভাব’, ‘ইংরেজি সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র’, ‘জীবনানন্দের কবিতা পাঠ’, ইত্যাদি তাঁর বহু গ্রন্থের তালিকায় এ গ্রন্থটি অবশ্যই এক উজ্জ্বল সংযোজন।