কথার সময় : সময়ের কথা
- তপোধীর ভট্টাচার্য
আমাদের চেতনা সময়ের সন্ততি। সময় অহরহ আমাদের গড়ছে এবং ভাঙছে। আমরা বিশ্বাস-অনুভব-চিন্তা-কৃত্যে সময়েরই অনুসরণ করি। এই সময়ের সবটাই আলোকিত নয়, অনেকখানি অন্ধকারেও মোড়া। ভাষায় তার প্রভাব যে কতরকম ভাবে ধরা পড়ে তার ইয়ত্তা নেই। কথকতার অজস্র ধরন মানে সময়ের স্বর ও অন্তস্বরের। বিচিত্র বর্ণালি উপন্যাসে-আখ্যানে তার বিচ্ছুরণ দেখি অহরহ। কথাজুড়ে প্রকাশিত হচ্ছে কালের বার্তা। এই নিরিখে সমস্তই কালের বিচিত্র অভিব্যক্তি। ‘সকলেই আছে বুক জলে / কেউ জানে কেউ বা জানে না। তবু কথাকারেরা অনবরত লিখে যাচ্ছেন বিস্ময়ে-মুগ্ধতায়-যন্ত্রণায় ব্যক্ত সময়ের স্বর। এই নিবন্ধ-সংকলনে এসব স্বর-বিশ্লেষণের উদ্যম ধরা পড়েছে কিনা, সেই বিচার করুন সহৃদয় পাঠকেরা, এসময়ের অগ্রণী সাহিত্য-ভাবুক ড. তপোধীর ভট্টাচার্য কীভাবে পাঠ করেছেন কথার সময় আর সময়ের কথাকে তা অনুসরণ করে সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যের আখ্যান-চিন্তা সম্পর্কে আমরা অবহিত হতে পারি। সময়ের ইন্ধন হিসেবে সমর্পিত সাম্প্রতিক জীবন ও জগতের নতুন তাৎপর্য যদি স্পষ্ট হয় আরও, তবে সার্থক হবে প্রকাশের এই উদ্যম।
এ-সময়ের পুরোধা সাহিত্যিতাত্তিক ও সমালোচক তপোধীর ভট্টাচার্য (জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯) বাংলা সাহিত্যের যশস্বী চিন্তাবিদ। বাঙালির নিজস্ব নন্দনতত্ত্ব হিসেবে উত্তর আধুনিক চেতনার অন্যতম প্রস্তাবক তিনি। এখনও পর্যন্ত তাঁর ১৩৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘তুমি সেই পীড়িত কুসুম’ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। মোট ৩২ টি কবিতা-সংকলন তাঁর রয়েছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কার্যদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এছাড়া দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাবান রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করছেন। ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এমেরিটাস অধ্যাপকও। নিরন্তর মনন-চৰ্চা করাই তাঁর জীবনের ব্রত। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : প্রতীচ্যের সাহিত্যতত্ত্ব, ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণ, আধুনিকতা : পর্ব থেকে পর্বান্তর, বাখতিন তত্ত্ব ও প্রয়োগ, ছোটগল্পের সুলুক-সন্ধান, উপন্যাসের সময়, উপন্যাসের বিনির্মাণ, কবিতার রূপান্তর, কবিতা : নন্দন ও সময় প্রভৃতি।