মুষলের অন্তহীন ছায়া
- তপোধীর ভট্টাচার্য
একাকীত্ব, শূন্যতা, বিচ্ছিন্নতা - আধুনিক তিন মারীর আগ্রাসনে চূর্ণবিচূর্ণ ও বিকৃত হয়ে পড়েছে মানসিকতা, মাৎস্যন্যায়ের কালবেলা গিলে ফেলছে সমস্ত স্বতস্ফূর্ত সাবলীল যাপন। এই মৌষলপর্বেরও বড় প্রয়োজন এক ধী-সম্পন্ন কৃষ্ণদ্বৈপায়নকে। এসময়ে “—যদিও আগুন / চেটে-পুটে শুষে নিচ্ছে সমস্ত সমিধ” গোটা সমাজ জুড়ে যদিও “বিষাক্ত নিঃশ্বাসে ঢলে পড়ছে চূর্ণ মানুষেরা” তবুও মনে রাখা অত্যাবশ্যক “সমস্ত বয়ান রূপকের কথকতা নয়”, সেই সিদ্ধান্তের দায়িত্বেই প্রাজ্ঞ অধ্যাপক তাত্ত্বিক সমালোচক বলে যান “কেউ বুঝুক বা না বুঝুক লিখে যাই / ধ্বংসস্তুপের ভেতরে আছি অবিচল”।
এ-সময়ের পুরোধা সাহিত্যিতাত্তিক ও সমালোচক তপোধীর ভট্টাচার্য (জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯) বাংলা সাহিত্যের যশস্বী চিন্তাবিদ। বাঙালির নিজস্ব নন্দনতত্ত্ব হিসেবে উত্তর আধুনিক চেতনার অন্যতম প্রস্তাবক তিনি। এখনও পর্যন্ত তাঁর ১৩৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘তুমি সেই পীড়িত কুসুম’ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। মোট ৩২ টি কবিতা-সংকলন তাঁর রয়েছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কার্যদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এছাড়া দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাবান রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করছেন। ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এমেরিটাস অধ্যাপকও। নিরন্তর মনন-চৰ্চা করাই তাঁর জীবনের ব্রত। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : প্রতীচ্যের সাহিত্যতত্ত্ব, ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণ, আধুনিকতা : পর্ব থেকে পর্বান্তর, বাখতিন তত্ত্ব ও প্রয়োগ, ছোটগল্পের সুলুক-সন্ধান, উপন্যাসের সময়, উপন্যাসের বিনির্মাণ, কবিতার রূপান্তর, কবিতা : নন্দন ও সময় প্রভৃতি।