আকাশবাণী কলকাতা আজকের নাটক...
- হীরেন চট্টোপাধ্যায়
রেডিও যখন কেবল কয়েকটি অভিজাত ও বনেদি বাড়ির সম্পদ, আজকের মিনি-সেট নয়। দশাসই চেহারায় রেডিও সদর্পে ও সগর্বে সাজানো আসবাব, তখন শুক্রবার রাত আটটায় এই ঘোষণা —‘আকাশবাণী কলকাতা, আজকের নাটক’-রক্তে শিহরণ জাগাত। সত্যনারায়ণের আর হরির লুটের মতো ডাকতে হতো না কাউকে, আমজনতা শতরঞ্চি ঢাকা মেঝেতে ভিড় জমিয়ে বসত, গৃহকর্তাও সপরিবার উচ্চাসনে বসে উপভোগ করতেন তা। তখন নাটকের অভিনয়কাল ছিল অনেক বেশি কিন্তু প্রচারের বিঘ্ন ছিল অনেক। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বাণীকুমারের মতো কিছু দক্ষ ও প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। আকাশবাণী কলকাতার আদি যুগের বাংলা নাটক এবং ধীরে ধীরে তার পরিবর্তনই গল্পের মতো করে বলেছেন লেখক এই গ্রন্থে। জাদুমন্ত্রে যার কাটা দুটো পলকে পেছনে ঘুরিয়ে আনা যেত সেই আশ্চর্য সময় যখন বনেদি বড়োলোকের বৈঠকখানায় শোভা পাচ্ছে দশাসই বেতারযন্ত্র, মেঝেতে সব বয়সের তন্ময় শ্রোতা, রেডিয়োতে গম গম করছে ‘আকাশবাণী কলকাতা, আজকের নাটক .....’ নস্টালজিয়ায় ভরা বেতার-নাটকের সেই সব সোনার দিনগুলি স্মৃতির ধূসর পাতা থেকে উজ্জ্বলভাবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন প্রবীন এক বেতার নাট্যকার, বেতার-নাটকের উত্থান ও প্রতিষ্ঠার দলিল হয়ে উঠেছে তা। প্রতি ছত্রে রোমাঞ্চ আর বিস্ময়, সেই সঙ্গে হঠাৎ যেন ক্ষণপ্রভা স্মৃতির শিহরণ।
জনপ্রিয় অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক নন, এ এক অন্য হীরেন চট্টোপাধ্যায়, বলা যায় নাটুকে হীরেন চট্টোপাধ্যায়। নিয়মিত অভিনয় করতেন। অগ্নিমিত্রের ‘সূত্রধার’ গ্রুপে। কলকাতার বিভিন্ন মঞ্চে। অনেক মঞ্চ নাটক অভিনয় করেছেন। নীহাররঞ্জন গুপ্তের রঙ্গম’ সংস্থায়। নিয়মিত অভিনয় হয়েছে তপন থিয়েটারে নাটক। এর সঙ্গে রয়েছে দূরদর্শন ও আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রচারিত প্রচুর নাটক। পিনাকী চৌধুরী প্রযোজনা করেছেন দিল্লি নেটওয়ার্কের হিন্দি ধারাবাহিক, তেরো পর্বের বাংলা ধারাবাহিক প্রচারিত হয়েছে। কলকাতা দূরদর্শন থেকে, সেই সঙ্গে বেশ কিছু টেলিফিল্ম। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে অর্ধশতাধিক নাটক প্রচারিত হয়েছে, প্রযোজনা করেছেন সূর্য সরকার, অজিত মুখোপাধ্যায়, সমরেশ ঘোষ, শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায়, ড: দীপক চন্দ্র পোদ্দারের মতো মানুষ।